ঢাকা,বুধবার, ২৯ মে ২০২৪

এশিয়ায় রেলপথে জ্বালানি তেল রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা রাশিয়ার

রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোয় রেলপথে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বাড়াতে চায়। এ লক্ষ্যে দেশটি পূর্ব সাইবেরিয়ায় অবস্থিত রেল লোডিং টার্মিনালগুলো পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাইপলাইন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি ট্রান্সনেফটের এক শীর্ষ নির্বাহী এ তথ্য জানিয়েছেন। ট্রান্সনেফট ও রাশিয়ান রেলওয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। খবর আপস্ট্রিম অনলাইন।

উন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ রুশ জ্বালানি তেলের ওপর প্রাইস ক্যাপ (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা) আরোপ করেছে। ৫ ডিসেম্বর এটি কার্যকর হয়। সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে ইউরোপের দেয়া নিষেধাজ্ঞাও একই দিন কার্যকর হয়েছে। জ্বালানি তেলের বাজারে রাশিয়ার আধিপত্য ও আয় কমিয়ে আনাই এর মূল উদ্দেশ্য। তবে সম্প্রতি দেশটির সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রাইস ক্যাপ কিংবা ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা দেশটির জ্বালানি তেল রফতানিতে কোনো রকম প্রভাব ফেলেনি।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোয় ইস্ট সাইবেরিয়া-প্যাসিফিক ওশান (ইএসপিও) অয়েল পাইপলাইন দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে রাশিয়া। এটি পরিচালনা করে ট্রান্সনেফট। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান নিকোলাই তোকারেভ রাষ্ট্রীয় একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাত্কারে জানান, বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী রফতানি চালানের জন্য পাইপলাইনটির বহির্গমন পয়েন্টে সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে তার প্রতিষ্ঠান পূর্ব সাইবেরিয়ায় নিষ্ক্রিয় রেল ট্যাংক অবকাঠামোগুলো পুনরায় চালুর কাজ করছে। উদ্দেশ্য এশিয়ার দেশগুলোয় রফতানি আরো বাড়ানো।

২০১৬ সালের আগে রাশিয়ার উত্তোলক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রেলপথ ব্যবহার করে চীন ও কজমিনো বন্দরে সরবরাহ করত। মূলত ইএসপিও পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতার কারণেই রেল রুট ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েছিল। ওই সময় পাইপলাইনটি সম্প্রসারণের কাজ চলছিল।

তোকারেভ বলেন, পূর্ব সাইবেরিয়ায় মেগেট রেল ট্যাংক লোডিং টার্মিনাল পুনরায় চালু করলে উত্তোলন প্রতিষ্ঠানগুলো এর মাধ্যমে দৈনিক ৬২ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল চীনে সরবরাহ করতে পারবে। রেলপথে পরিবহন শুরু হলে উত্তোলকরা কজমিনো টার্মিনালে দিনে অতিরিক্ত ১ লাখ ৪৫ হাজার ব্যারেল সরবরাহ করতে পারবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে জ্বালানি পণ্যের বাণিজ্যিক রুটে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে রুশ জ্বালানি তেলের প্রধান ক্রেতা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। কিন্তু বর্তমানে রাশিয়া ইউরোপের পরিবর্তে এশিয়ায় বাজার সম্প্রসারণ করছে। অন্যদিকে ব্যাপক মূল্যছাড় সুবিধার কারণে চীন ও ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো রাশিয়া থেকে রেকর্ড পরিমাণে জ্বালানি তেল ক্রয় করছে।

কিন্তু ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির জ্বালানি তেল রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে চলতি মাসের এখন পর্যন্ত রফতানি লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। এছাড়া পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানি পরিবহন ব্যয়। ট্যাংকার স্বল্পতার পাশাপাশি রুশ উৎপাদকদের প্রথাগত ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবর্তে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বাজার হিস্যা বাড়াতে হচ্ছে। এটি পরিবহন ব্যয় বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করছে। এদিকে অতিরিক্ত চার্জের কারণে উরাল ক্রুডসহ নিজস্ব জ্বালানি তেল কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে রাশিয়াকে। কারণ বিকল্প বাজারগুলোয় অবস্থান ধরে রাখতে দেশটিকে প্রতিযোগিতামূলক দাম ধরে রাখতে হবে।

এনজে

পাঠকের মতামত: